শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন
ক্রীড়া ডেস্ক: লক্ষ্যটা বড় হলেও অসম্ভব ছিল না। বিশেষ করে চলতি আসরেই আগের ৬ ম্যাচে যে দল ৩ বার পেরিয়েছে ৩০০ রানের কোটা, তাদের জন্য ৩১৫ রানের লক্ষ্যটা অন্তত ধরাছোয়ার মধ্যেই ছিল। তার ওপর মাথায় যখন ঝুলছে হারলেই বিদায় হওয়ার শঙ্কা, তখন নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে হলেও এ লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলা উচিৎ ছিলো বাংলাদেশ দলের।
কিন্তু পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। এক সাকিব আল হাসান ব্যতীত আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যান উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। শেষদিকে একাই লড়াই করেছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দুজনই ফিফটি করেন, তবে তা যথেষ্ঠ প্রমাণিত হয়নি।
বাংলাদেশের শেষ চারের আশা গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। বার্মিংহামে ভারতীয় সমর্থকে ঠাসা গ্যালারিকে উত্তাল করে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা জিতল ২৮ রানে।
পরাজয়ের ব্যবধান হয়তো খুব বড় মনে হচ্ছে না, তবে ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা শেষ হয়ে গেছে আসলে ম্যাচ শেষের বেশ আগেই। মূল ব্যাটসম্যানদের আলগা শটের মিছিলে বাংলাদেশের রান তাড়া জমে ওঠেনি সেভাবে।
৯ রানেই নতুন জীবন। তামিম ইকবালের কাছ থেকে পাওয়া উপহার সানন্দে গ্রহণ করে রোহিত শর্মা যন্ত্রণায় ডোবালেন বাংলাদেশকে। সেঞ্চুরিতে ছুঁলেন রেকর্ড। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে তার জুটিতেই গড়া হলো আরেকটি রেকর্ড। সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের সৌজন্যে এর পর লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ। ভারত এরপরও গড়ে চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
বিশ্বকাপে এবার আগের তিন সেঞ্চুরির দুটিতেই শুরুর দিকে জীবন পেয়েছিলেন রোহিত। এই ম্যাচেও সেটির চড়া মূল্য বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ বলে করেছেন ১০৪।
এবারের আসরে রোহিতের এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এক বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরি আছে কেবল আর কুমার সাঙ্গাকারার।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতকে উদ্বোধনী জুটিতে ১৮০ রান এনে দেন রোহিত ও রাহুল। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম জুটিতে সর্বোচ্চ রান এটিই।
দুর্দান্ত শুরুর পরও ভারত আরও বড় স্কোর গড়তে পারেনি মূলত মুস্তাফিজর রহমানের সৌজন্যে। তার বলেই শুরুতে ক্যাচ ছেড়েছিলেন তামিম। হতাশা পেছনে ফেলে পুরোনো বলে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাঁহাতি পেসার। ৫৯ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট।
এই প্রথম বিশ্বকাপে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের কোনো পেসার। ক্যারিয়ারের প্রথম ৯ ওয়ানডেতেই ৩ বার ৫ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ আরেকটি ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন ৪৩ ম্যাচ পর।
রোহিতের ঝলক শুরু হয়েছিল ম্যাচের ওভার থেকেই। মাশরাফির শর্ট বল সীমানার বাইরে ফেলেন পুল শটে। পুল শটেই রোহিত সুযোগ দিলেন পঞ্চম ওভারে। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে মিড উইকেটের দিকে ছুটে বলের নিচে যেতে পারলেও হাতে জমাতে পারলেন না তামিম।
পরের ওভারে সাইফকে এক্সট্রা কাভার দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে রোহিত যেন উদযাপন করলেন নতুন জীবন। সেই জীবনে ছুটতে থাকলেন অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ছন্দ পেয়ে যান রাহুলও। জুটিতে রান আসতে থাকে অনায়াসে।
১০৫ বলে আসে জুটির শতরান, পরের পঞ্চাশে লাগে কেবল ৩৫ বল। রোহিত ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৫ বলে। পরের পঞ্চাশেও লেগেছে ঠিক ৪৫ বল। বিশ্বকাপের পঞ্চম ও ওয়ানডেতে ২৬তম সেঞ্চুরি।
অনেক সময়ই সেঞ্চুরির পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রোহিত। এ দিন সুযোগটি দেননি সৌম্য সরকার। স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন রোহিত।
সঙ্গীকে হারানোর পর বেশি দূর যেতে পারেননি রাহুল। স্লোয়ারে ফেরেন তিনিও। ৯২ বলে ৭৭ রান করা ওপেনার বিশ্বকাপে এবার রুবেলের প্রথম শিকার।
চোখধাঁধানো কয়েকটি শটে বিরাট কোহলির রান রথ ছুটতে শুরু করেছিল। ইনিংসের বাংলাদেশের সেরা সময়টুকু আসে তখনই। মুস্তাফিজের দুটি কাটার দলকে উপহার দেয় দুটি উইকেট। পুল শট সীমানায় সোজা ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন কোহলি। নতুন ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে ফেরেন স্লিপে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে।
ডাবল উইকেট মেডেনে যে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন মুস্তাফিজ, পরের ওভারেই তা আলগা করে দেন সাইফ। হাফ ভলি, শর্ট পিচ, স্টাম্পের বাইরে জায়গা, টানা তিনটি চারে চাপ সরিয়ে দেন রিশাভ পান্ত।
৪১ বলে ৪৮ রান করা পান্তকে পরে বিদায় করেন ইনিংস জুড়ে দারুণ বোলিং করা সাকিব। মহেন্দ্র সিং ধোনির ৩৩ বলে ৩৫ ভারতকে নিয়ে যায় তিনশর ওপারে।
শেষ ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ পূরণ করেন ৫ উইকেট। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পেরেছে কেবল ৬৩ রান।
শেষটা এত ভালো হলো বলেই লক্ষ্য যায়নি বাংলাদেশের নাগালের বাইরে। কিন্তু বিশ্বকাপে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে হারল ব্যাটসম্যানরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রাহুল ৭৭, রোহিত ১০৪, কোহলি ২৬, পান্ত ৪৮, পান্ডিয়া ০, ধোনি ৩৫, কার্তিক ৮, ভুবনেশ্বর ২, শামি ১, বুমরাহ ০*; মাশরাফি ৫-০-৩৬-০, সাইফ ৭-০-৫৯-০, মুস্তাফিজ ১০-১-৫৯-৫, সাকিব ১০-০-৪১-১, মোসাদ্দেক ৪-০-৩২-০, রুবেল ৮-০-৪৮-১, সৌম্য ৬-০-৩৩-১)
বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ২৮৬ (তামিম ২২, সৌম্য ৩৬, সাকিব ৬৬, মুশফিক ২৪, লিটন ২২, মোসাদ্দেক ৩, সাব্বির ৩৬, সাইফ ৫১*, মাশরাফি ৮, রুবেল ৯, মুস্তাফিজ ০; ভুবনেশ্বর ৯-০-৫১-১, বুমরাহ ১০-১-৫৫-৪, শামি ৯-০-৬৮-১, চেহেল ১০-০-৫০-১, পান্ডিয়া ১০-০-৬০-৩)
ফল: ভারত ২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা